Wednesday, December 16, 2009

প্রলয়োল্লাস - কাজী নজরুল ইসলাম

তোরা সব জয়ধ্বনি কর্‌ !
           তোরা সব জয়ধ্বনি কর্‌ !!
ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল্-বোশেখীর ঝড়।
           তোরা সব জয়ধ্বনি কর্‌ !
           তোরা সব জয়ধ্বনি কর্‌ !!

আসছে এবার অনাগত প্রলয়-নেশার নৃত্য-পাগল,
সিন্ধুপারের সিংহ-দ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল!
            মৃত্যু-গহন অন্ধ-কূপে
            মহাকালের চণ্ড-রূপে--
                      ধূম্র-ধুপে
বজ্র-শিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ঙ্কর--
            ওরে ঐ হাসছে ভয়ঙ্কর!
            তোরা সব জয়ধ্বনি কর্‌ !
            তোরা সব জয়ধ্বনি কর্‌ !!


ঝামর তাহার কেশের দোলায় ঝাপ্‌টা মেরে গগন দুলায়,
সর্বনাশী জ্বালা-মুখী ধূমকেতু তার চামর ঢুলায়!
            বিশ্বপাতার বক্ষ-কোলে
             রক্ত তাহার কৃপাণ ঝোলে
                        দোদুল দোলে!
অট্টরোলের হট্টগোলে স্তব্ধ চরাচর--
            ওরে ঐ স্তব্ধ চরাচর!
            তোরা সব জয়ধ্বনি কর্‌ !
            তোরা সব জয়ধ্বনি কর্‌ !!

দ্বাদশ রবির বহ্নি-জ্বালা ভয়াল তাহার নয়ন-কটায়,
দিগন্তরের কাঁদন লুটায় পিঙ্গল তার ত্রস্ত জটায়!
          বিন্দু তাহার নয়ন-জলে
          সপ্ত মহাসিন্ধু দোলে
                    কপোল-তলে!
বিশ্ব-মায়ের আসন তারি বিপুল বাহুর 'পর--
         হাঁকে ঐ "জয় প্রলয়ঙ্কর!"
         তোরা সব জয়ধ্বনি কর্‌ !
         তোরা সব জয়ধ্বনি কর্‌ !!

মাভৈঃ মাভৈঃ! জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে।
জরায়-মরা মুমূর্ষদের প্রাণ-লুকানো ঐ বিনাশে।
       এবার মহা-নিশার শেষে
       আসবে ঊষা অরুণ হেসে
                 করুণ বেশে!
দিগম্বরের জটায় লুকায় শিশু চাঁদের কর,
আলো তার ভরবে এবার ঘর।
          তোরা সব জয়ধ্বনি কর্‌ !
          তোরা সব জয়ধ্বনি কর্‌ !!

ঐ সে মহাকাল সারথি রক্ত-তড়িৎ চাবুক হানে,
রণিয়ে ওঠে হ্রষার কাঁদন বজ্র-গানে ঝড়-তুফানে!
ক্ষুরের দাপট তরায় লেগে উল্কা ছুটায় নীল খিলানে!
                    গগন-তলের নীল খিলানে।
           অন্ধ কারার বন্ধ কূপে
           দেবতা বাঁধা যজ্ঞ-যূপে
                          পাষান-স্তুপে!
এই তো রে তার আসার সময় ঐ রথ-ঘর্ঘর--
                       শোনা যায় ঐ রথ-ঘর্ঘর!
                       তোরা সব জয়ধ্বনি কর্‌ !
                       তোরা সব জয়ধ্বনি কর্‌ !!

ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর? --প্রলয় নূতন সৃজন-বেদন!
আসছে নবীন--জীবন-হারা অসুন্দরে করতে ছেদন!
                  তাই সে এমন কেশে বেশে
                  প্রলয় বয়েও আসছে হেসে--
                             মধুর হেসে।
ভেঙে আবার গ'ড়তে জানে সে চির-সুন্দর!
           তোরা সব জয়ধ্বনি কর্‌ !
           তোরা সব জয়ধ্বনি কর্‌ !!

ঐ ভাঙা-গড়া খেলা যে তার কিসের তবে ডর?
                   তোরা সব জয়ধ্বনি কর্‌!
                   বধূরা প্রদীপ তুলে ধর্‌!
কাল ভয়ঙ্করের বেশে এবার ঐ আসে সুন্দর!
                               তোরা সব জয়ধ্বনি কর্‌ !
                               তোরা সব জয়ধ্বনি কর্‌ !!

No comments:

Post a Comment